Wednesday 18 June 2014

লিখেছেনঃ Syed Mohammad Rezwan Life Expectancy

পৃথিবীতে এমন অনেক বইই আছে যার কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে আপনি প্রলুব্ধ হবেন বইটি পড়ার জন্য, বইটি এক আকর্ষণ তৈরি করবে আপনার মাঝে, কিন্তু পড়ার পরে মনে হবে লেখক আপনাকে পুরোপুরি ধোঁকা দিয়েছেন। এক সুন্দর, দারুন প্লটকে খুন করা হয়েছে। ঠিক তেমনই একটা থ্রিলার গত রাতে পড়ে শেষ করলাম। ডীন কুন্টয এর 'লাইফ এক্সপেক্টেন্সি'।
এক ঝড়ো রাতে জিমি টক এর জন্ম এবং তার দাদা'র মৃত্যু হল একই সময়ে, একই হাসপাতালে। যখন তাঁর প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায় এবং তাঁর বাবা একই হাসপাতালের আরেকটি ওয়ার্ডে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে, জিমি টক এর বাবা রুডি টক এক ওয়ার্ড থেকে আর এক ওয়ার্ডে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত। একদিকে সুখ তো অন্যদিকে দুঃখ। দাদা টক মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে ছেলে রুডি টককে তাঁর আগত পৌত্র জিমি টককে নিয়ে কিছু ভবিষ্যৎবাণী করে গেল। জিমি টক এর জীবনে পাঁচটি অন্ধকারময় এবং ভয়াবহ দিন আসবে। প্রথমটি আসবে জিমির ২০ তম জন্মদিনের সময় এবং শেষটি ঘটবে তার ৩০ তম জন্মদিনের সময়। জিমির বাবা রুডি বিশ্বাস না করলেও সেই পাঁচটি তারিখ লিখে নেয়। রুডি বিশ্বাস করতে বাধ্য হল যখন তাঁর বাবার আরও একটি ভবিষ্যৎবাণী মিলে গেল জিমি'র জন্মের সাথে সাথে। জিমি'র দাদা বলেছিলেন যে, তাঁর পৌত্রের জন্মের সময় তাঁর পায়ের ৩টি আঙ্গুল জোড়া অবস্থায় থাকবে, জিমির জন্মের সময় এবং ওজন ও উচ্চতাও মিলে গেল !
লাইফ এক্সপেক্টেন্সির কাহিনী সংক্ষেপ এককথায় অসাধারন। এক চিত্তাকর্ষক কাহিনী এবং এই কাহিনী পাঠককে পুরো বইটি পড়ার জন্য প্রলোভিত করে। আর এই থ্রিলারটি পড়ার আমার আরও একটি কারন ছিল। এই বইয়ের কাহিনী যেন আমারই জীবন কাহিনী! জ্যোতিষকার্যে আমি মোটেও বিশ্বাস করি না, আমার পুরো পরিবারেও কেউ করে না। আমার জন্মের কয়েকমাস আগে আমাদেরই এক আত্মীয় বলেছিলেন, আমার জীবনে পাঁচটি 'নিশ্চিত' 'ভয়াবহ দিন' আসবে যা আমাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাবে। তবে সেই ব্যক্তি 'লাইফ এক্সপেক্টেন্সি'র দাদা'র মত নির্দিষ্ট কোন দিন বলেননি। তিনি কিন্তু কোন জ্যোতিষও নন। সেই পাঁচটির মধ্যে চারটি দিনে মৃত্যুকে আমি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখনও বেঁচে আছি! যাই হোক বন্ধুর মুখে এই কাহিনী সংক্ষেপ শোনার পরে মাত্র দুইরাতে বইটি পড়ে ফেললাম।
লাইফ এক্সপেক্টেন্সির ভালো দিকঃ গল্পের প্লট ভালো। বইটি পড়া যায় এবং তা বেশ দ্রুততার সাথে।
খারাপ দিকঃ যেখানে কাহিনী সংক্ষেপকে আমি অসাধারন, চিত্তাকর্ষক, লোভনীয় কাহিনী বললাম সেখানে বইয়ের আবার খারাপ দিক কীইবা থাকতে পারে!! কারন পুরা ডাহা মিথ্যা কথা বলে পাঠককে তথা আমাকে বইটা পড়ানো হয়েছে। বুঝলাম দাদা বলেছেন পাঁচটি মরন দিন আসবে, তোমরা প্রস্তুত থেকো। প্রস্তুত যখন ছিলই তখন জিমি কোন আক্কেলে ঘর থেকে বের হল এবং সেধে সেধে কেন এক সাইকোপ্যাথ ব্যাংক ডাকাতের রাইফেলের মুখোমুখি হল !! কাহিনী তো কুন্টয অন্যভাবেও তৈরী করতে পারতেন ?? ঠিকআছে, প্রথম 'ভয়াবহ' দিন সম্বন্ধে তাঁদের ধারনা ছিল না যে কী পরিমান 'ভয়াবহ' হবে তাই তাঁরা একটু অসতর্কই ছিল, কিন্তু পরবর্তী দিনগুলোতে প্রথমে সতর্ক থেকেও কেন সরে আসলো সতর্কতা থেকে?? অদ্ভুত!! কুন্টযকে বলা হয় 'মাষ্টার অফ আনপ্রেডিক্ট্যাবিলিটি'। আনপ্রেডিক্ট্যাবিলিটি আনার জন্য এমন সব হাস্যরসাত্মক 'ক্লিফহ্যাঙ্গার' সৃষ্টি করবেন যার কোনই মানে নেই।
কদর্য দিকঃ হিন্দি সিরিয়ালে কী দেখা যায়?? দশম পর্বে কাহিনী যে জায়গায় ছিল, ৩০ তম পর্বেও কাহিনী সেই একই জায়গায় রয়ে গেছে। অর্থাৎ কাহিনী এগোলো না, কাহিনীর কোন গতিই নেই। লাইফ এক্সপেক্টেন্সিতেও একই জিনিস পেলাম আমি। ৫০ পৃষ্ঠায় যে ক্রিসমাস ডিনারে বসলো পরিবারের সবাই, ৮০ পৃষ্ঠা পর্যন্তও তাঁরা খেতে লাগলেন এবং ফালতু প্যাচাল পারতে থাকলেন। এগুলা কী!! পশ্চিমা অনেক লেখকই কাহিনী স্ট্রেচ করেন, স্টিফেন কিংও করেন, কিন্তু তাই বলে এতটাই কদর্যভাবে! জিমির দাদী কোন নিউজপেপার পড়েন এবং কেন পড়েন, কোন পাতায় কি কি থাকে এগুলো জেনে একজন পাঠক কী করবে! হ্যাঁ অবশ্যই চরিত্র চিত্রায়নে দরকার হয় এই ধরনের তথ্য যদি সেই চরিত্র কাহিনীর জন্য গুরুত্বপুর্ণ হয়ে থাকেন। নিউজপেপারের কাহিনী নিয়ে যদি চার পৃষ্ঠা লেখা হয় তাহলে একে কাহিনী স্ট্রেচিং ছাড়া আর কীইবা বলা যায়!!
বুঝলাম, টক পরিবার হচ্ছে বেকারি ফ্যামিলি। তাঁরা প্যাস্ট্রি কিং ওই লোকালয়ের। সেটা তো বুঝানোই যায় অল্প কয়েক কথায়। কিন্তু তাই বলে জার্মানী, ফ্রান্সের দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার মত নামের প্যাস্ট্রির ম্যানু তো একটা সাসপেন্স থ্রিলারে মানায় না।
থ্রিলার, হররে হিউমর ভালই লাগে। ব্রিদিং স্পেস হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কুন্টয যে হিউমর, স্যাট্যায়ার লাইফ এক্সপেক্টেন্সি তে ব্যবহার করেছেন তা মোটেও মানসম্মত ছিল না। অনেক সস্তা মানের হিউমরে ভর্তি। হিউমরেরও তো একটা সঠিক সময় আছে। যখন এক সাইকো আপনার মগজের বাইরের খোলসে একটা শটগান ধরে রাখবে, তখন কী এগুলো মানায়!! রম্যগল্প হলে যেত, কিন্তু ডার্ক সাসপেন্স থ্রিলার ক্যাটাগরিতে যখন বই বিক্রি করা হবে তখন অবশ্যই এই সস্তা হিউমর কাহিনীর সাথে যায় না। সাসপেন্সরই তো কতল করে দিল। একটা সিকোয়েন্সে, খোলা মাঠে পাঁচজন শটগান, কুড়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিমির বিপক্ষে, কিন্তু তারপরেও জিমি'র কিছুই হয় না। জিমি তো লেখক দ্বারাই নিরাপদ!!
কুন্টয এর থ্রিলার প্রথম পড়ি ৮২০ পৃষ্ঠার 'ফ্রম দ্য কর্নার অফ হিজ আইস'। ৮২০ পৃষ্ঠার একটা সাসপেন্স থ্রিলারে পুরো ৮২০ পৃষ্ঠাতেই সাসপেন্স ধরে রাখা এবং পাঠককেও বইয়ের মাঝে আটকে রাখা অবশ্যই বড় গুণ। কিন্তু লাইফ এক্সপেক্টেন্সি!! কিছুই বলার আর বাকী নাই। আমি পুরোপুরি হতাশ। কিন্তু ব্যাপার নাহ!! জীবনে অনেক বাজে বইই তো পড়েছি। ৫৩০ পৃষ্ঠাকে যদি ২৫০ এ নামিয়ে আনতেন কুন্টয, তাহলেও হয়ত ভালো কিছু বলতে পারতাম।
গুডরীডস এ দেখলাম ওভারঅল রেটিং এই বইয়ের ৩.৯৫/৫.০০ এবং সেখানকার রিভিউতেও পাঠকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ও ৫/৫ রেটিং। কিন্তু আমি তা পারলাম না। কেবলমাত্র বইটি পড়া যায় বলেই ১.৫ দিলাম।
এক নজরেঃ নামঃ লাইফ এক্সপেক্টেন্সি লেখকঃ ডীন কুন্টয প্রকাশকালঃ ২০০৪ ধরনঃ সাসপেন্স/ সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলার গুডরীডস রেটিং- ৩.৯৫/৫.০০ আমার রেটিং- ১.৫/৫.০০

0 comments:

প্রিয় কবিতারা...