Friday 12 December 2014

কথোপকথন ৩৮

- পুর্ণেন্দু পত্রী

 - নন্দিনী! আমার খুব ভয় করে, বড় ভয় করে।
কোনও একদিন বুঝি জ্বর হবে, দরজা, দালান-ভাঙ্গা জ্বর
তুষারপাতের মত আগুনের ঢল নেমে এসে
নিঃশব্দে দখল করে নেবে এই শরীরের অলিগলি শহর বন্দর।
বালিশের ওয়াড়ের ঘেরাটোপ ছিঁড়ে ফেলে তুলো।
এখন হয়েছে মেঘ, উড়ো হাঁস, সাদা কবুতর।
সেইভাবে জ্বর এসে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে কোন অন্য ভূমন্ডলে
নন্দিনী! আমার খুব ভয় করে, বড় ভয় করে।
- বাজে কথা বকে বকে কি যে সুখ পাও, শুভঙ্কর।
সত্যি বুঝি না।
কার জন্যে ছুরি নিয়ে খেলায় মেতেছো?
তুমি কি আমার মুখে রক্তদৃশ্য এঁকে দিতে চাও?
- ছুরি কই? ছুরি ছুঁড়ে দিয়েছি জঙ্গলে
খাঁ খাঁ দুপুরের মত লম্বা ছুরি ছিল বটে কিছুদিন আগে।
তখন যে প্রতিদ্বন্দী ছিল
তখন যে যুদ্ধ-দাঙ্গা-লুটপাট-ডাকাতির সম্ভাবনা ছিল
এখন ভীষণ এক ভয় ছাড়া অন্য কোনো প্রতিপক্ষ নেই।
যুদ্ধ নেই, কামানের তোপ নেই, অসুখ-বিসুখ কিছু নেই
ভয় ছাড়া অন্য কোনো বীজাণুর মারাত্মক আক্রমণ নেই।
-আমার যা কিছু ছিল সবই তো দিয়েছি, শুভঙ্কর!
তোমার বাঘের থাবা তাও ভরে দিয়েছি খাবারে।
চাঁদের মত ঘন বৃক্ষ ছায়া টাঙ্গিয়ে দিয়েছি
মাথার উপরে, ঠিক আকাশের মাপে মাপে বুনে।
তবুও, তোমার এত ভয়?
তবুও কিসের এত ভয়?
 - সেই ছেলেবেলা থেকে যা ছুঁয়েছি সব ভেঙ্গে গেছে।
প্রকান্ড ইস্কুলবাড়ি কাচের চিমনীর মত ঝড়ে ভেঙ্গে গেল।
একান্নবর্তীর দীর্ঘ দালান-বারান্দা ছেঁড়া কাগজের কুচি হয়ে গেল।
কচি হাতে রুয়ে রুয়ে সাজিয়েছিলাম এক উৎফুল্ল বাগান
কুরে কুরে খেয়ে গেছে লাল পিঁপড়ে, পোকা ও মাকড়।
একটা পতাকা ছিল, আকাশের অদ্বিতীয় সূর্যের মতন
তর্কে ও বিতর্কে তাও সাতটা আটটা টুকরো হয়ে গেল।
গাঁয়ের নদীকে ছুঁয়ে কী ভুল করেছি
নদীর ব্রীজকে ছুঁয়ে কী ভুল করেছি
কাগজ ও মুদ্রাযন্ত্র ছুঁয়ে আমি কী ভুল করেছি।
নন্দিনী!
তোমাকে যদি বাগান, পতাকা, ব্রীজ, কাগজের মতন হারাই?

0 comments:

প্রিয় কবিতারা...