আপনি কখন, কবে, কোথায়, কার উপর, আর ঠিক
কিভাবে প্রেমে পড়বেন তা আপনি বুঝে উঠতে পারবেন না। হয়তোবা দেখা যাবে প্রথম দর্শনেই
প্রেমে পড়ে গিয়েছেন। ভ্লাদিমির নভোকভ এর ললিতা উপন্যাস এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘হ্যামবার্ট’
এর ভাষায় বলতে গেলে বলতে হবে,
“It was love at first sight, at last sight, at
ever and ever sight.”
সেই মুহুর্তটা আমাদের সবার জীবণেই কখনো
না কখনো একবারের জন্য হলেও আসে। আর যখন সেই মূহুর্তটি আসে তখন আমাদের মনে হয় ঠিক এই মানুষটির অপেক্ষায় আমরা এখনো বেঁচে আছি। পুরো পৃথিবী তখন আপনার কাছে
অদ্ভুত মনে হবে, অনেকটা মাতালের মতো। আর যখন সেই হাজার বছরের পরিচিত মনে হওয়া
মানুষটি আপনার সান্নিধ্যে আসবে বা আপনার আশে পাশে ঘুর ঘুর করবে তখন আপনি পড়বেন সব
থেকে বিব্রতকর অবস্থায়। হতে পারে আপনার বয়স ৩০ এর কোঠায় রয়েছে, কিন্তু আপনার মনে
হবে আপনি বয়ঃসন্ধিকাল পার করছেন।
হতে পারে যার প্রেমে পড়েছেন সে আপনার থেকে
বয়সে অনেক ছোট, কিন্তু আপনার মন বলবে আপনিও নিজেও তো অনেক ছোট... মনের দিক দিয়ে
এখনো ছোট রয়ে গিয়েছেন। মিলাতে শুরু করবেন প্রেমে পরা মানুষটার বয়সের কি কি কাজ
এখনো আপনি করেন। ঠিক কি কি কারণে আপনি এখনো তার বয়সে রয়ে গিয়েছেন।
হতে পারে যার প্রেমে পড়েছেন সে আপনার থেকে
বড়, তখন আপনার মন বলবে আপনি নিজেও তো অনেক বড়!! মিলাতে শুরু করবেন ঠিক কি কি
ম্যাচুরিটি আপনার মধ্যে আগেই চলে এসেছে যা আপনার বয়সী কারো মধ্যে এখনো আসেনি।
হয়তোবা আপনি এর আগেও প্রেমে পড়েছিলেন যে কিনা
সময়ের সাথে চলে গিয়েছিল আপনাকে ফেলে, তখন আপনার নতুন করে প্রেমে পরা মানুষটিকে মনে
হবে আপনি যেন সেই আগের হারিয়ে ফেলা মানুষটিকেই আবার ফিরে পেয়েছেন।
হতে পারে নতুন করে প্রেমে পরা মানুষটি সাথে
পরিচিত হওয়ার আগে আপনার একটি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সম্পর্কের বেড়াজালে সেটি আর
টিকতে পারেনি।
এতো অনুভূতি আসার পরেও হয়তো আপনি বলতে পারবেন
না তাকে মুখ ফুটে। কারণ আপনার মন সায় দিলেও আপনার মাথা বলবে, “এটা অসম্ভব, এটা
কখনোই মেনে নেওয়া যায় না, মেনে নিবে না সমাজ, মেনে নিবে না সময়, আর মেনে নিবে না
আপনার প্রেমে পড়া মানুষটি”। তাই হয়তো আপনিও কিছু না বলে নিরবেই চেষ্টা করে যাবেন
প্রিয় মানুষটির কাছাকাছি থাকার... যতটা সম্ভব, ঠিক ততোটাই... আর তাই হয়তো কিছু
অন্যায়ের আশ্রয়ও নিতে হতে পারে আপনাকে। কারণ John Lyly 'Euphues' তে বলেছেন,
"The rules of fair play do not apply in love
and war."
‘ললিতা’ বইয়ে এসমস্ত বিষয়ই খুব সুন্দর এবং
ট্র্যাজেডি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে ভ্লাদিমির নভোকভ। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হ্যামবার্ট
যখন তার লেখালেখির কাজে নিউ ইংল্যান্ড এসে Charlotte
Haze নামের এক বিধবা মহিলার বাসায় একটি রুম
ভাড়া নেয় তখনই সে প্রেমে পড়ে যায় প্রথম দর্শনেই। তার মনে পড়ে যায় তার কৈশোরের সেই
হাড়ানো প্রেমিকার কথা যে কিনা অল্প বয়সেই চলে গিয়েছিল না ফেরার দেশে। আপনি হয়তো
ভাবছেন হ্যামবার্ট প্রেমে পড়েছিল বিধবার। ভেবে থাকলে ভুল ভেবেছেন। সে প্রেমে পড়েছিল বিধবার
১৩ বছরের মেয়ে Dolores এর উপর, যার ডাক নাম ছিল "Lo", "Lola", or
"Dolly" অথবা হামবার্ট
এর নিজস্ব দেওয়া নাম ‘ললিতা’। আর ঠিক এই
কারণেই হামবার্ট থেকে যায় সেই বিধবার বাসায়... শুধুমাত্র ললিতার কাছাকাছি থাকার
আশায়।
সময়ের সাথে
সাথে Dolly এর প্রেম বেড়েই চলে হামবার্ট এর মনে। আর অপরদিকে বাড়তে থাকে হ্যামবার্ট এর প্রতি Dolly এর মায়ের ভালোবাসা। আর তাই Dolly যখন সামার ক্যাম্প করতে ছুটিতে যায় তখন Charlotte Haze হ্যামবার্ট কে বিয়ে করতে
বলে তাকে, আর না হয় সে যেন চলে যায় বাসা থেকে। হ্যামবার্ট ডলিকে হারিয়ে
ফেলার ভয়ে বিয়ে করে Charlotte Haze কে। কিন্তু আপন মনে চলতেই থাকে তার
গোপন অথবা নিষিদ্ধ ভালোবাসার কথা। ডায়েরিতে সে টুকে রাখতে থাকে তার মনের অন্তরালের
কথাগুলো, যা কিনা একসময় নজরে পড়ে যায় Charlotte
Haze। সে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে হ্যামবার্টকে তিরষ্কার
করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে গাড়ির ধাক্কায় মারা যায়। হ্যামবার্ট তার মৃত্যুর কথা
ডলির কাছ থেকে গোপন রাখে কিছু সময়ের জন্য, সামার ক্যাম্প থেকে তাকে নিয়ে ঘুড়তে
থাকে হোটেলে, মোটলে...
তারপর...
তারপর জানতে
বইটি পড়তে বসে জান। আশা করি খারাপ লাগবে না।
............................................................................................................
পোষ্ট শেষ করছি
বইটিতে ভালো লাগা কিছু লাইন দিয়ে
..................................................................................................................................................................
দেখা হবে আবার যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি...
0 comments: